ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৩:০৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

অনন্য এক মানুষ নেলী সেনগুপ্তা, সেলাম মেমসাহেব  

স্বপন সেন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৪১ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০২১ বুধবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

জুন ১৯৩১, দিল্লি।
ঘড়িতে ঠিক রাত দশটা। সেন্ট্রাল জেলে পাহারা বদল হয়েছে। রাতের ওয়ার্ডার জেনানা সেলে কয়েদীদের মাথা গুনতি করতে এসে দেখে আর পাঁচটা স্বদেশী বন্দিনীর মাঝে এক 'গোরি আওরত'। খুপরি সেলে তখন এক নারকীয় পরিবেশ, একে তো দিল্লির অসহ্য গরম তার ওপর জোরালো আলো জ্বলছে। আশপাশের সেল থেকে ভেসে আসছে অন্য কয়েদীদের চীৎকার। মেটরা ‌‌হিন্দু পানি মুসলিম পানি বলে হাঁক দিয়ে ঘোরাঘুরি করে জল খাওয়াচ্ছে।
বেচারা ভয়ে ভয়ে ছুটে গেলো জেলার সাহেবের কাছে পাছে কোন গলতি হয়ে যায়। তিনি আশ্বস্ত করলেন ঐ বৃটিশ মহিলা সাধারণ কয়েদী রূপেই থাকবে, তেমনটাই আদেশ।
কে এই মেমসাহেব?
পুরো নাম এডিথ এলেন গ্রে, জন্ম১৮৮৬ সালে কেমব্রিজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাড়াতে তাদের বাড়ি হওয়ায় অনেক ভারতীয় ছাত্র সেখানে পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকতো। ইংরেজ তনয়া কৈশোরেই প্রেমে পড়লেন ওখানে পড়তে যাওয়া এরকম এক বঙ্গসন্তানের। কট্টর বাবা-মায়ের আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ে করে স্বামীর হাত ধরে এদেশে চলে আসেন।
পতিদেব দেশে ফিরে ওকালতি শুরু করেন এবং শীঘ্রই একজন সফল আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।
এলো ১৯২১ সাল। গান্ধীজীর দেশজুড়ে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নেমে পড়লেন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। কর্তা হয়ে ওঠেন বাংলায় গান্ধীজীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুগামী, তিনবার পরপর কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হন। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথমবার গ্রেফতার হলে জনসমর্থনে পথে নামেন তাঁর বিদেশী স্ত্রী। বিভিন্ন জনসমাবেশে বক্তৃতা দেয়া ছাড়াও বাড়ি বাড়ি খাদি বিক্রি করতে থাকেন। বিদেশী পণ্য বর্জনের আহবান জানানোয় তিনিও চৌদ্দ দিনের জন্য জেলে যান।
লবণ সত্যাগ্রহের সময়ে যখন অধিকাংশ নেতাই কারাগারে তখন ১৯৩৩ সালে কলকাতার অধিবেশনে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মনোনীত হন। এই পদে আনি বেসান্তের পর তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বিদেশিনী।
রাঁচি কারাগারে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি করপোরেশনের অল্ডারম্যান পদে আসীন হন এবং কংগ্রেসের টিকিটে ১৯৪০ এবং ৪৬-এ প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার সদস্য হয়ে আসেন। বিশ্বযুদ্ধের সময় বাংলায় বিদেশী সৈন্যদের অসভ্য আচরণের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম বিধানসভায় মুখর হন।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি তাঁর স্বামীর পৈতৃক ভিটা চট্টগ্রামে থাকবেন বলে মনস্থ করেন। নেহেরুজীর অনুরোধে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু পরিষদের চেয়ারম্যান হন এবং ১৯৫৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সেখানকার সংসদে আসেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে বহুবার প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পথে নামেন ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে সমর্থ হন।
একাত্তরে বাংলাদেশ গঠনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ অনুরোধে চট্টগ্রামেই থেকে যান এবং বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেকে নিযুক্ত রাখেন।
১৯৭২ সালে এক দুর্ঘটনায় তিনি কোমরে আঘাত পান। খবর পেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টায় কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সম্মান জানাতে  ছুটে আসে আপামর বাঙালি।
সে বছরই স্বাধীনতা আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়। 
পরের বছর ১৯৭৩ সালে ২৩ অক্টোবর কলকাতাতেই পরলোকগমন করেন তিনি।
যারা এখনো চিনতে পারেন নি তাদের বলি, এই মহিয়সী নারী হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার পরবর্তীকালে লিন্ডসে স্ট্রীটের নাম পরিবর্তন করে তাঁর নামাঙ্কিত করে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।